শ্রীমদ্ভাগবত প্রথম স্কন্ধ (Srimad Bhagavatam-Pratham Skandha )
Author: কৃষ্ণকৃপাশ্রীমূর্তি শ্রীল অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ
Description
এই ‘শ্রীমদ্ভাগবত’ হচ্ছে এক বহু খণ্ড সমন্বিত সর্বোত্কৃষ্ট দার্শনিক মহাকাব্য তথা পুরাণগ্রন্থ (অমলপুরাণ বা মহাপুরাণ)। ভারতবর্ষের সমস্ত লিপিবদ্ধ জ্ঞান-ভাণ্ডারের তালিকায় এই পুরাণ এক মহিমামণ্ডিত আসনে অধিষ্ঠিত। ভারতের সনাতন জ্ঞান প্রাচীন সংস্কৃত ভাষায় রচিত বেদ নামক গ্রন্থে প্রকাশিত হয়েছে। মানবিক জ্ঞানের সমস্ত ক্ষেত্রই এই বেদের অন্তর্ভুক্ত। মূলত শ্রৌতপন্থায় এই জ্ঞান সংরক্ষিত হত। ‘ভগবানের শক্ত্যাবেশ অবতার’ শ্রীল ব্যাসদেবই সর্বপ্রথম এই বেদকে গ্রন্থাকারে লিপিবদ্ধ করেন। বেদ রচনার পর, বেদের অন্তর্নিহিত সারমর্মকে শ্রীমদ্ভাগবতরূপে উপস্থাপিত করার জন্য শ্রীল ব্যাসদেবের গুরুদেব তাঁকে অনুপ্রাণিত করেন। বৈদিক শাস্ত্র-বৃক্ষের সুপক্ব ফল (নিগমকল্পতরোর্গলিতং ফলম্) রূপে পরিচিত এই শ্রীমদ্ভাগবত হচ্ছে বৈদিক জ্ঞানের সবচেয়ে পূর্ণাঙ্গ ও প্রামাণিক ভাষ্য। ১। আদি চিন্ময় গ্রহলোকটি একটি সুবিশাল পদ্মফুলের মতো। এর নাম গোলোক বৃন্দাবন। এটিই পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পরম ধাম। ২। গোলোক নামক এই আদি গ্রহলোকটি তার চারপাশে ব্রহ্মজ্যোতি নামক এক দিব্য জ্যোতি বিকিরণ করছে। এই ব্রহ্মজ্যোতিই হচ্ছে নিরাকারবাদীদের পরম গন্তব্যস্থল। ৩। জড় ব্রহ্মাণ্ডে সূর্যরশ্মির মধ্যে যেমন অসংখ্য জড় গ্রহলোক রয়েছে, তেমনি, অসীম ব্রহ্মজ্যোতির মধ্যে রয়েছে অসংখ্য চিন্ময় গ্রহপুঞ্জ। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের স্বাংশ প্রকাশেরাই এই সমস্ত চিন্ময় গ্রহপুঞ্জের ঈশ্বর, আর সেখানকার বাসিন্দারা সকলেই হচ্ছেন নিত্যমুক্ত জীব। তাঁরা সবাই চতুর্ভুজ। ভগবান সেখানে নারায়ণরূপে পরিচিত, আর গ্রহলোকগুলিকে বলা হয় বৈকুণ্ঠ। ৪। কখনো কখনো এক খণ্ড চিন্ময় মেঘ ব্রহ্মজ্যোতি সমন্বিত চিদাকাশের একটি ক্ষুদ্র অংশকে আচ্ছাদিত করে। সেই আচ্ছাদিত অংশটির নাম মহত্তত্ত্ব। তারপর ভগবান নিজেকে মহাবিষ্ণুরূপে বিস্তার করেন এবং মহত্তত্ত্বের অন্তর্ভুক্ত জলে শয়ন করেন। সেই জলকে বলা হয় কারণসমুদ্র (কারণজল)। ৫। যখন তিনি কারণসমুদ্রে যোগনিদ্রায় নিদ্রিত হন, তখন তাঁর নিঃশ্বাস থেকে অসংখ্য ব্রহ্মাণ্ড নির্গত হয়। এই সকল ব্রহ্মাণ্ডগুলি ভাসমান অবস্থায় কারণসমুদ্রের সর্বত্র ইতস্তত ছড়ানো থাকে। মহাবিষ্ণুর একটিমাত্র নিঃশ্বাস কাল পর্যন্তই তাদের স্থিতি। ৬। মহাবিষ্ণু পুনরায় নিজেকে গর্ভোদকশায়ী বিষ্ণুরূপে বিস্তার করেন এবং প্রতিটি ব্রহ্মাণ্ডে প্রবেশ করেন। সেখানে তিনি গর্ভসমুদ্রে, সর্পাকৃতি শেষ অবতারের শয্যায় শায়িত হন। তাঁর নাভি থেকে নির্গত হয় এক পদ্মনাল, এবং সেই পদ্মফুলের উপরে সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মার জন্ম হয়। জীবের কামনা বাসনার বৈচিত্র্য অনুসারে, ব্রহ্মা ব্রহ্মাণ্ডের মধ্যে বিভিন্ন আকৃতিসম্পন্ন জীবগণকে সৃষ্টি করেন। তিনিই সূর্য, চন্দ্র ও অন্যান্য দেবতাদের সৃষ্টি করেন। ৭। সূর্য প্রতিটি ব্রহ্মাণ্ডের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। সমগ্র ব্রহ্মাণ্ডে অসীম আলোক ও তাপ বিকীরণ করছে এই সূর্য। মহত্তত্ত্বের অন্তর্ভুক্ত অনন্ত কোটি ব্রহ্মাণ্ডে অনন্ত কোটি সূর্য রয়েছে। জড় ব্রহ্মাণ্ডগুলি যেহেতু স্বভাবতই অন্ধকারাচ্ছন্ন, তাই এখানে সূর্য ও চন্দ্রের প্রয়োজন। এই সমস্ত অন্ধকার ব্রহ্মাণ্ডকে ভেদ করে ব্রহ্মজ্যোতিতে উদ্ভাসিত চিন্ময় জগতে প্রবেশ করার নির্দেশই বেদ আমাদের দান করে। ৮। বৈকুণ্ঠ গ্রহপুঞ্জ স্বয়ং উদ্ভাসিত। ব্রহ্মজ্যোতি বৈকুণ্ঠ গ্রহপুঞ্জেরই জ্যোতি। সেখানে তাই সূর্য, চন্দ্র কিংবা বিদ্যুতের প্রয়োজন হয় না। ৯। শ্রীমদ্ভাগবত আমাদেরকে সেই পরম ধাম গোলোক বৃন্দাবনে পৌঁছাতে সাহায্য করে। প্রত্যেকের জন্যই দ্বার উন্মুক্ত আছে। সেই বিশেষ লক্ষ্যই মানব জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য, কেননা এটিই হচ্ছে জীবনের পরম পূর্ণতা।
Sample Audio